সদস্য বাৰ্তা:আপনি আল্লাহর পথে আসুন

এই পৃষ্ঠাৰ সমল অন্য ভাষাত সমৰ্থিত নহয়।
অসমীয়া ৱিকিপিডিয়াৰ পৰা

কবর থেকে ফিরে আসা এক যুবতীর কিছু কথঃ

করাচীর গুলশান ইকবাল এলাকায় বায়তুল করম জামে মসজিদে মাওলানা মুফতি আবদুর রউফ ওয়াজ করার সময়ে একটি বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি বলেন ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের গিলগিট অঞ্চলে েএকজন লোক একটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার কানে নারী কন্ঠের চিৎকার ভে সে এলেঅ আমাকে বের করো আমি বেচে আছি আমাকে বের করো আমি বেচে আছি একাধিকবার এ আওয়াজ শোনার পর লোকটি লোকালয়ে গিয়ে লোকদের জানালেন অনেক কবরেরর পাশে গিয়ে একই আওয়াজ শোনার পর স্থানীয় মিসজিদের ইমাম সাহেবের মতামত জানার জন্য গেল ইমাম সাহেব কবর খুড়ে মেয়েটিকে বের করার সিদ্ধান্ত জানালেন কবরের উপরের মাটি সরিয়ে একখানি তক্তা সরিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখা গেল কবরের ভেতর বসা মেয়েটি উলঙ্গ তার হায়ে কাফন নেই মেয়েটি বলর আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার জন্য পোশাক নিয়ে আসো দ্রুত গিয়ে একজন পোশাক নিয়ে এসে কবরে ভিতর ছুড়ে তিল পোশাক পরিধান করে কবর থেকে আপাদমস্তক ঢেলে বের হয়ে মেয়েটি দ্রুত নিজের বাড়িতে গের এবং একটি কামরায় প্রবেশ করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো তাকে দরজা খুলে দিতে বলা হলে সে বলল দরজা খুলে দিচ্ছি তবে খুব সহসী লোক ব্যতীত কেউ আমার কামরায় আসবেন না কারণ আমাকে দেখে হার্টফেল হতে পারে কয়েকজন সাহসী লোক ভেতরে প্রবেশ করলেঅ মেয়েটি প্রথমে তার মাথার কাপড় সরালেঅ দেখা গেল তার মাথার চুলতো সেই চুলের নিচে মাথার চামড়াও নেই এরকম হওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় সে বলল বেচে থাকার সময়ে আমি মাথার চুল খোলা রেখে পথেঘাটে চলালেরা করতাম বেগানা পুরুষদের আমার চুলের সৌন্দয দেখাতামএ কারণে আমার মাথার চামড়াসহ সব চুল টেনে টেনে তুলে ফেলা হয়েছে তারপর মেয়েটি চেহারা দেখালো দেখা গেল তার উপরের ঠোট কেটে ফেলা হয়েছে চেহারায় শুধু দুই পাটি দাত ব্যতীত কিছু নেই ঠোট কেন নেই জিজ্ঞাসা করায় সে বলল বেচে থাকার সময়ে আমি দুই ঠোটে লিপিস্টক লাগিয়ে বেপর্দা অবস্থায় ঘরের বাইরে বেগানা পুরুষদের মধ্যে বিচরণ করতাম এ কারণে আমার ঠোট কেটে ফেলা হয়েছে মেয়েটি তারপর তার হাত পায়ের নখবিহীন আঙ্গুল দেখালো তার একটি নখও নেই নখের কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় বলল আমি হাত পায়ের আঙ্গুলে নেইল পালিশ লাগাতাম এজন্য আমার হাত পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছে মাথা ঠোট এবং নখ দেখানোর পর মেয়েটি আর কোন কথা বলল না বেহুশ হয়ে ঢলে পড়লো দেখা গেল তার প্রানহীন দেহ পড়ে আছে আত্মীয়স্বজন কাদতে কাদতে মেয়েটিকে পুনরায় তার কবরে দাফন করে এলো (চোখে দেখা কবরের আযাব ২০৪ পৃষ্ঠা)

গল্প থেকে শিক্ষা করি[সম্পাদনা কৰক]

                           চার নামাযীর ঘটনা

চার জন লোক এক মসজিদের নামায পড়তে গেল ওযু করে যার যার মত নিয়ত বেধে নামায পড়তে লেগে গেল খুব মনোযোগ ও বিনয়ের সাথে রুকু সেজদা করছিল এমন সময় হঠাৎ মুয়াজ্জেন এসে মসজিদে প্রবেশ করলো একজন নামাযী বলে ফেললো,‘‘আরে ভাই মুয়াজ্জেন, সময় তো অনেক আগেই হয়ে গেছে, এখনও আযান দেওনি নাকি?’’ দ্বিতীয় নামাযী তাকে বললো,‘‘ আরে তুমি নামাযের মধ্যে কথা বলে ফেলেছো, সুতরাং তোমার নামায অবশ্যই ভেঙে গেছে’’ তৃতীয় নামাযী দ্বিতীয় মাযীকে বললো,‘‘ আরে চাচা মিয়া আপনি অন্যকে কী বলছেন, আপনার নিজের নামাযও তো ভেঙে গেছে নিজের চিন্তা করে দেখেন ‘’’ চতুর্থ নামাযী বললো ‘‘আল্লাহ পাকের শুকুর যে এদের তিন জনের মত আমার নামায ভাঙেনি সুতরাং চার জনেরই নামায বরবাদ হয়েছে এর একমাত্র কারণ অন্যের দোষ ধরতে যাওয়া অন্যের দোষ যে ধরতে যাবে সে সবার আগে বরবাদ হবে সব চেয়ে আরামে আছে তারা যারা নিজের দোষ দেখে এই অন্যেরা তার দোষ দেখিয়ে দিলে সে সেটা মেনে নিয়ে সংশোধন করে নেয় (থানবী কলীদে নবী খন্ড ৫-৬ পৃষ্ঠা ৩২৬) (মুসলমানের হাসি ১৩২ পৃষ্ঠা তৃতীয় খন্ড)

                          মনে মনে নামায                 

দুই বন্ধু নেশা খাওয়ার পর বসে বসে আলাপ করছিল একজন বললো আখ খাওয়ার খুব মজা চিবাতে গেলে রসে একেবারে মুখটা ভরে যায় আমরা আখের চাষ করবো মড়াৎ করে ভাঙবো আর খাবো মজা হবে’’ অপর বন্ধু বললো হা, সত্যি আখের চাষ করলো মড়াৎ মড়াৎ করে ভাঙবো আর খেতে থাকবো’’

 এই কথা শুনে প্রথম ব্যক্তি রেগে গেল বললো আমি তো একটা আখ ভেঙেছি 

আর তুই দুইটা ভাঙলি কেন? দ্বিতীয় জন বললো ক্ষেত আমার আমি যতটা ইচ্ছা ততটা ভাঙবো তাতে তোর কি?’’ কিন্তু প্রথম ব্যক্তি একথা মানতে রাজি নয় এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেল জগড়া এত দূর পযন্ত গড়ালো যে শেষ পযন্ত প্রথম ব্যক্তি যেয়ে কোর্টে মামলা দায়ের করে দিল যে আমি একটা আখ ভেঙেছি আর সে দুইটি কেন ভাঙলো এর বিচার চাইহাকিম বললো এই জমির সরকালী খাজনা আদায় কর’’ এভাবে উভয়ের কাছে থেকে জমির খাজানা আদায় করার পর হাকিম বললেন, ‘‘যাও এবার গিয়ে যার যত খুশী আখ ভাঙতে থাক আর খেতে থাক’’ (মাওয়ায়েযে আশরাফিয়া (করাচী ছাপা)(মুসলসানের হাসি ৯০ পৃষ্ঠা ২য় খন্ড)

অন্যায় বিচারঃ

একবার এক শীর্ণ কায় হাড্ডিসর বৃদ্ধ এলো চিকিৎসকের কাছে এবং বললো, আমার অবস্থা খুবই খারাপ, চোখে মুখে শুধু সর্ষেফুল দেখি আমার একটা ব্যবস্থা করুন ডাক্তার সাব

চিকিৎসক তার শিরা ও জিহ্বা পরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করলেন, গতরাতে কি খেয়েছিলে? জবাব দিলোঃ ‍কিছু না চিকিৎসকঃ আজ কি নাশতা করে এসেছো? বৃদ্ধঃ কিছুই না চিকিৎসক দেখলেন যে, এ ব্যক্তি বয়োবৃদ্ধ এবং কংকালসার হওয়া ছাড়াও চরম ক্ষুধার্ত খাদ্যাভাবে তার প্রাণ এই বুঝি বের হয়ে গেলো চিকিৎসকের বুঝতে বাকী রইলো না যে, এই বৃদ্ধ বেচারার জীবন প্রায় শেষ প্রান্তে যে কোন সময় সে ধরাশায়ী হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে চিকিৎসকের খুবই মায়া হলো এই বৃদ্ধের জন্য অসহায় লোকটির করুণ দশা চিকিৎসকের হৃদয়কেও জ্বালিয়ে দিলো তাই চিকিৎসক বৃদ্ধকে সত্য কথা বলতে পারছিলেন না সে যাতে কষ্ট না পায় সে দিকে খেয়াল রেখে বললেন, তোমার যে রোগ এ থেকে নিরাময় লাভের কোন সহজ পথ নেই এর জন্য তেমন ওষুধও দেখছি না তবে তোমার অবস্থা ভালো হওয়ার জণ্যে তোমাকে তোমার মন যা চায় তাই করতে হবে, মন যা চায় খাও, যা করতে চায় তাই করো এটাই তোমার ভাল হওয়ার পথ, এর জন্য অন্য কোন পথ নেই মৃত্যুপথযাত্রী দিশেহারা বৃদ্ধ বললোঃ আপনি ঠিকই বলেছেন ডাক্তার সাব; তবে আমার মন যা চায় তাতো খেতে পারি না, অর্থাৎ নেই যে খাবো

চিকিৎসক তার কথা শুনে আরো মর্মাহত হলেন তার জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে তাকে যেহেতু কষ্ট দিতে চাননি সেহেতু বললেনঃ আমার কথাও তাই, যা নেই তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাবে না যা পারো তাই করো মোটকথা তোমার মনটাকে যতো খুশীতে রাখো, যা আছে তাই মন খুশী করে খাও, যা করতে মনটা ইচ্ছে করে তাই করো সুন্দর সুন্দর কল্পনা করো তাতেও মন আনন্দ পাবে 
নিরুপায় বৃদ্ধঃ মাশাল্লা! আপনি খুবই ভাল ডাক্তার আল্লাহ আপনার মঙ্গল দিন আমার মনের কথাই বলেছেন আমি জানি যে, কখনো আমার মনের খাহেশ মিটেনি, অপূর্ণ রয়ে গেছে তাই সুন্দর সুন্দর কল্পনা করাই ভালো কল্পনা যতো ইচ্ছে করা যায়
চিকিৎসকঃ ঠিকই বাবা, তুমি ঠিকই বুঝেছো আল্লাহ তোমাকে শেফা দিক এখন যাও মন যেখানে চায় সেখানে ঘুরে বেড়াও আশাকরি তোমার দীলের আরজু মিটবে
 কষ্কালসার বৃদ্ধঃ মনটা চাচ্ছে সবুজ বনবাদাড়ে যাই, নহরের পাশে গিয়ে বসি পানির ছলছল চলার দৃশ্য দেখি 
চিকিৎসকঃ খুব ভালো কথা, যাও সেখানেই যাও খোদা হাফেজ 
চিকিৎসকের কথায় বৃদ্ধের বেশ ভালই লাগলো মনটা খুশীতে নেচে উঠলো কল্পনার নীল আকাশে মনের পাখা মেলে দিয়ে উড়তে লাগলো সে হাটতে হাটতে পৌছে গেলো একটা নহরের কাছে কলকল রবে পানি বয়ে চলেছে এক নিবিষ্ট মনে পানির স্রোত ও গতিবিধি লক্ষ্য করতে করতে হঠাৎ তার নজর পড়লো নহরের পাড়ে বসা একজন দরবেশের উপর দরবেশ একান্ত মনোযোগের সাথে মাথা নূয়ে পানির দিকে তাকিয়ে ছিলো কোন দিকেই তার খেয়াল নেই বৃদ্ধের আগমন তিনি টেরই পেলেন না, এদিকে বৃদ্ধ দরবেশকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো এক সময় তার দৃষ্টি পড়লো গিয়ে দরবেশের প্রশস্ত ঘাড়ের উপর বেশ পুরো, মোটা ও নরম গোশতওয়ালা ঘাড় এ রকম মোটাসোটা ঘাড়াগর্দ্দান দেখে বুড়োর হাত ‍ইসপিস করতে লাগলো জোরসে কশে একটি থাপ্পড় দেয়ার জন্য দরবেশের ঘাড়ে থাপ্পড় বসালে এর যে  কি আওযাজ হবে সে কল্পনা পেয়ে বসলো বুড়োকে তবে তার জানা ছিলো যে, বেহুদা কাউকে চড়-থাপ্পড় দেয়া যায় না তার মনে পড়লো চিকিৎসকের কথা চিকিৎসক বলেছিলেন তার রোগের একমাত্র ওষুধই হলো মনে যা আসে তাই করা মনের খুশীই তার রোগের পথ্য ব্যস, আর নিজেকে সামলাতে পারলো না যেমন ভাবা তেমন কাজ হাতের আস্তিন গুটিয়ে হাত তুললো আসমানের দিকে তারপর শরীরের সমস্ত জোর খাটিয়ে দরবেশের ঘাড়ে মারলো কষে এক থাপ্পড়, তড়াক করে বিরাট একটা আওয়াজ হলো সাথে সাথেই খিলখিল করে সে হাসতে শুরু করলো দরবেশতো সম্পূর্ণ বেখেয়াল অবস্থায় ও থাপ্পড় খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন পানিতে কোন মতে নিজেকে সামলে নিলেন এবং ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দাড়িয়ে গেলেন থাপ্পড়দাতাকে ধরার জন্য, পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলেন এক ক্ষীণকায় হাড্ডিসার বৃদ্ধ, মরণের পথযাত্রী দরবেশ তাকে পাল্টা থাপ্পড় লাগানোর কথা ভাবতেই বুঝতে পারলেন যে, তাকে থাপ্পড় লাগালে হয়তো মারাই পড়বে তাই শক্ত করে তার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলেনঃ বদবখত কোথাকার! তোর কয়টা মাথা আছে যে, অনর্থক আমাকে মারলি? তোর গায়েতো এক ফোটা শক্তিও নেই যে, তোর উপর হাত লাগাবো তোর জীবনতো এমনিতেই নাকের ডগার এসে পৌছেছে কেনো এ কাজ করলি? আবার নিলর্জ্জের মতো হাসছিস কেনো? পাগল হয়েছিস নাকি? 

বৃদ্ধঃ জানিনে কেনো এ কাজ করেছি শুধু মনটা চাইলো আর ডাক্তার ও বলেছিলো মনে যা আসবে তাই যেনো করি কিন্তু হাসছি এ জন্যে যে, চমৎকার আওয়াজ হয়েছে বুঝতে পারলাম না এ আওয়াজ আমার হাতের না তোমার ঘাড়ের?

দরবেশঃ বুঝতে পারছিস না? আয় তোকে বুঝাই একথা বলেই বৃদ্ধকে টেনে হেচড়ে নিয়ে চললেন কাজীর বাড়ি এবং কাজীকে বিস্তারিত জানিয়ে বললেন এই হলো আমার নালিশ আর এই হলো দুষ্ট বুড়ো এবার কি করবেন করুন যদি  বলুন কেসাস (সমান পাল্টা আঘাত) করবো- তাই  করবো নতুবা যা বলুন তাই হবে আমি তাকে কেসাস (সমান পাল্টা আঘাত) করতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেখলাম যে এতে তার মউত হতে পারে যাহোক, এটা বড়ই অন্যায় যে, শহরে কাজী থাকবে অথচ একজন আরেকজনকে চড় থাপ্পড় লাগাবে
কাজী বৃদ্ধকে তাকিয়ে দেখলেন এবং বুঝতে পারলেন, যে, তার উপর কেসাস করা অসম্ভব তাই বাধ্য হয়ে দরবেশকে নসিহত করে বললেন, বন্ধু আমার! দেখতেই পাচ্ছেন লোকটিকে মারার মতো অবস্থানেই হয়তো বা সে ওতে মরেই যাবে তখন তাকে হত্যার দায় আপনাকেই বহন করতে হবে, সুস্থ- সবল লোককেই মারা যায় শাস্তি দেয়া যায় একে তো কিছুই করা যাবে না সে এখনো যে জীবিত আছে তা-ই অনেক জোরে, আসুন ওকে মাফ করে দিন ক্ষমা করার ভেতরও একটা আনন্দ আছে, প্রতিশোধে কোন আনন্দ ও তৃপ্তি নেই এ রকম বিষয়েই তো ক্ষমা করতে হয় দরবেশ কাকে ক্ষমা করবো? মানুষ যখন জেনে যাবে যে, এ ধরনের অন্যায় কাজের কোন বিচার হয়নি তখন শহরে অন্যায় অবিচার ছড়িয়ে পড়বে কেউ কাউকে মানবে না কাজীকেও পাত্তা দেবে না অরাজকতা ছড়িয়ে যাবে এটা এক অন্যায় হুকুম, সব খারাপ কাজেরই শাস্তি হওয়া উচিত আমি তাকে ক্ষমা করবো না, তিরিশ বছর গেলেওনা তাকে শাস্তি দিতেই হবে, কাজীঃ যা বললাম তাই এ বৃদ্ধ অসুস্থ একেবারে হাড্ডিসার ও মৃত্যুমুখে পতিত তার উপর থেকে নালিশ উঠিয়ে নিন

দরবেশঃ আমি কখনো রাজি হবো না কাজী বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ তোমার সাথে কত টাকা আছে?

বৃদ্ধঃ কিচ্ছুনা
কাজীঃ সকালে কি খেয়েছো?
বৃদ্ধঃ কিছুই খাইনি 
এবার কাজী দরবেশের দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখতেই পাচ্ছেন লোকটি অভুক্ত আপনাকে না হয় একটি থাপ্পড় মেরেছেই আপনার তো কিছু কমে যায়নি? ছেড়ে দিন তাকে আচ্ছা, আপনার কাছে কত টাকা আছে?
দরবেশঃ ছয় টাকা
কাজীঃ ঠিক আছে, এ ছয় টাকা অর্ধেক করে তিন টাকা আপনি নিন আর তিন টাকা তাকে দিন, বেচারা রুটি কিনে খাবে আল্লাহ আপনাকে পুরস্কার দেবেন দরবেশে প্রতিবাদ করে উঠলেন এবং বললেন, আজব বিচার তো! মারও খেলাম আবার টাকাও দেবো? এটা অন্যায় বিচার এটা জুলুম, এটা জবরদস্তি এ আবার  কি ধরনের রায় দিলেন একটা থাপ্পড়ের দাম কতো শুনি?
এরপর শুরু হলো কাজী আর দরবেশের মধ্যে তর্ক বিতর্ক ও বাকবিতণ্ডা এদিকে দুর্বল জয়ীফ বৃদ্ধটি ভাবতে লাগলো, তাহলে থাপ্পড় দিলে টাকা পাওয়া যায়! আর এক থাপ্পড়ের দাম তিন টাকা এসময় তার চোখ পড়লো কাজীর ঘাড়ের উপর এবং দেখলো যে, কাজীর ঘাড় দরবেশের চেয়েও অনেক মোটা আর গোশতে থলথল থাপ্পড় বেশ লাগবে আবার রঙিন কল্পনা তাকে পেয়ে বসলো কাজী আর দরবেশ কথা কাটাকাটিতে ব্যস্ত বৃদ্ধের হাত উঠে গেলো শূন্যে সবাইকে চমকে দিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে মেরে বসলো কাজীর ঘাড়ে আর বললো, আরো তিন টাকা দিন, তাহলে ছয় টাকা দিয়ে কিছু একটা খাওয়া যাবে 

কাজীর অবস্থা কে দেখে লজ্জা ও বিরক্তিতে মাথা তার নীচু হয়ে গেলো কিন্তু দরবেশ উল্লসিত হয়ে উঠলেন এবং পকেট থেকে ছয় টাকা বের করে এনে বললেন এই নিন তিন টাকা আমার থাপ্পড়ের, আর এই তিন টাকা আপনি যেটা খেলেন তার বাবদ কাজীঃ এটা কি ধরনের কথা? আমাকে মারার জন্য তুমি টাকা দিচ্ছো?

দরবেশঃ জ্বী হ্যাঁ, চড় থাপ্পড় যদি ভাল মূল্যবান জিনিস হয়ে থাকে তাহলে তার সবার জন্যই মূল্যবান আফসোস যে, আর কোন টাকা নেই হাতে দ্বিতীয় থাপ্পড়ের দাম যে একশো টাকারও বেশী কেননা, অন্যায় বিচারের শাস্তি এটি আফসোস আর টাকা নেই, নতুবা পুরো দামই দিয়ে দিতাম তোমার মতো কাজীর জন্য উপযুক্ত দামই হতো (মসনবীর গল্প ৬৬ পৃষ্ঠা)


প্রুতবিম্বঃ একজন বোকা মানুষ কুয়ার মধ্যে উকি মেরে একটি মানুষের ছবি দেখতে পেল ভয়ে ভয়ে মাকে এসে বলল, মা দেখো কুয়ার মধ্যে একটা চোর যেমন ছেলে তেমন মা, মা এসে পুত্রের পাশে দাড়িয়ে কুয়ার পানির মধ্যে দৃষ্টি নিক্ষের করে চিৎকার করে বলতে লাগল, দেখ দেখ সেই চোরের সাথে একজন মহিলাও আছে (বেহেশতী খুশবু ২৩ ‍পৃষ্ঠা)



iZ‡bi wQj PviUv †Q‡j| †Q‡j¸‡jvi bvgI wQj AvRe| cPv, evwm, MÜ, Avi gyBZv| GKevi iZ‡bi eÜz †eov‡Z G‡jv evwo‡Z| MÖv‡g Avm‡Z Zvi eÜz‡K A‡bK cwikÖg Ki‡Z n‡q‡Q| eÜzi A‡bK ÿzav jvM‡jv Ges ZvovZvwo Lvevi PvBj| iZbt GKUz mgq †`, †cvjvD †Kvigv ivbœv Kwi| eÜz ejjt Av‡i Gme jvM‡e bv,hv Av‡Q ZvB †`| iZb ZLb Zvi †Q‡j‡`i WvKjt cPvt fvZ Avb| evwmt Zievix Avb| fve fvj bv †`‡L eÜz ejj _vK ‡`v¯Í Avwg Lve bv| iZbt G‡Zv Kó K‡i G‡m‡Qv †Zvgv‡K wK bv LvB‡q Qvo‡ev? MÜ Wvj Avb| gyBZvt cvwb Avb| eÜz cv a‡i gvd †P‡q w`j GK †`Šo| (†dBmeyK †_‡K ‡bIqv)

GK †eKz‡ei jyw½ †Lvjve Mí| Geevi GK ivRv Zvi DwRi‡K Av‡`k w`‡jb †`‡ki †miv †eKze a‡i Avb‡Z| bvn‡j Zvi M`©vb KvUv co‡e| gš¿x Av‡`k cvjb Ki‡Z †miv †eAv‡°j LyR‡Z †ei n‡jb| wKš‘ A‡bK †LvRvi ciI †Kv_vI †Kvb †eAv‡°j Ly‡R cvb bv| Gfv‡e hLb wZwb cÖvq nZvk n‡q hvw”Q‡jb, wVK ZLbB †c‡jb †miv †eKze| †mB †jvK gv_vq K‡i bvbvb Dcnvi mvgMÖx wb‡q hv‡”Q Avi g‡bi my‡L Mvb Mv‡”Q| gš¿x †eKze †jvKwU‡K ejj- gš¿xt wK fvB, Lywk g‡b †Kv_vq hvb? †eKze jvewW †ewU Avb‡Z hvB| gš¿x jvewW †ewU? GUv Avevi wK wRwbl? †eKzet Zzwg Rvb bv? Zywg †Zv Avm‡jB †evKvt we‡qi 8 eQi cvi n‡jI Avgvi ev”&Pv nq bv| ZvB GKR‡bi evwo‡Z Zvi Kv‡Q Avgvi eD †i‡L Avwm| †mLv‡b 2 eQi ci Avgvi eD‡qi GKUv †g‡q nq| †g‡qi eqm 1 eQi nB‡Q| ZvB Avwg Avgvi eD I ev”Pv‡K evwo‡Z wb‡q Avb‡Z hvw”Q| gš¿x eySj GB e¨vUvB Avmj †eKze| ZvB Zv‡K mv‡_ wb‡q ivR`iev‡i Pjj| ivR`iev‡i †eKze‡K †`L‡Z bvix-cyiæ‡li fxo R‡m †Mj| gš¿x †mB †eKz‡ei Kvwnbx mevi mvg‡b KY©bv Kivi ci mevB j¾vq iægvj w`‡q bvK XvKj| wKš‘ †eKz‡ei Kv‡Q iægvj wQj bv| ZvB mevi †`Lv‡`Lx †m wb‡Ri jyw½ Dc‡i DwV‡q bv‡K w`j| Zvic‡iB n‡q †Mj wPwPs dvK| (‡dBm eyK †_‡K †bIqv)


বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীনঃ

এক ছিলো বুদ্ধিমান মাথা তার ভালো কাজ করলেও ধনসম্পদ কিছুই ছিলো না, তার কাজই ছিলো হেঁটে হেঁটে শহরে শহরে ঘুরে বেড়ানো, একবার এই বুদ্ধিমান রওয়ানা হেয়েছে এক শহর থেকে অন্য শহরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে এক বিজন মরুতে গিয়ে পৌঁছলো, চলার পথে  হঠাৎ এক আরব গেঁয়ো পথিকের দেখা, আরব তার উটে চড়ে পথ চলছে, উটের পিঠে দু’দিকে দু’টি বড় বস্তা ঝুলানো ছিলো পদচারী ভাবলো, যদিও আমি পায়ে হেটে চলছি ও ক্লান্ত এবং এই আরব উঠের পিঠেও আরাম আয়েশে চলছে, তথাটি সফরসঙ্গী তো পাওয়া গেলো, তার সাথে গল্প গুজব করা যাবে, ব্যস্ত থাকা যাবে পথের দূরত্ব কথায় কথায় ততো টের পাওয়া যাবে না 

উট সওয়ারীর কাছে পৌছেই লম্বা করে সালাম দিলো এবং বললো স্বাগতম, স্বাগতম তোমাকে দূর থেকে দেখেই খুশি হয়েছি পায়ে হাটা ও ক্লান্তির কথা না হয় বাদই দিলাম ভাই, একা পথ চলতে চলতে একেবারে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম এখন যতক্ষণ এক পথে চলবো অন্ততঃ পক্ষে দু’চারটে কথা বলার মানুষ পেলাম উট সওয়ারী সালামের জবাব দিয়ে বললো, আমিও ভাই একা চলতে চলতে বিরক্ত হয়ে শেষ পযন্ত নিজে নিজেই গান গাওয়া শুরু করলাম, তবে ভাই পায়ে হাটা আর উটে চড়ার মধ্যে তেমন কোন ফারাক নেই, আসলে পায়ে হাটাই ভালো, তোমার যদি উট না থাকে তাহলে সে উটের কখনো রোগ হবে না, উট কখনো চোরে নেবে না, কোন সময় উট রশি ছিড়ে পালাবে না, কোন সঞ্জিলে পৌছুলে উট, ঘোড়া বা গাধার জন্য ঘাস লতাপাতা খোজার কোন চিন্তা নেই একেবারে নিশ্চিন্তে থাকবে, কোন ভাবান নেই, কবি ঠিকই বলেছে,

         ‘‘আসুদে কাসি কে খার নাদারাদ
          আয কাহ ও জুশ খাবার নাদারাদ’’
         চিন্তা নেই ভাবনা নেই যার নেই গাধা
        ঘাস পাতা খড়ের তরে মন নেই বাধা’’

পদচারী বললো, না ভাই, সে কেমন কথা যদি কারো গাধা না থাকে তাহলে তো তার বোঝা তার মাথাতেই চাপে, পথ যদি দূরের হয় তাহেলে তার পায়েরই কষ্ট তবে হ্যাঁ, আমার কিন্তু হেটে চলতে তেমন খারাপ লাগেনা যখন ভাবি যে আমার দেহের বোঝা আমি নিজেই বইছি তখন মনে মনে খুশীই লাগে কিন্তু উটের ওপর চড়লে মনে হয় আমার পায়ের নিচে উট বেটারা নালিশ করছে, সওয়ারী হেসে বললো, তাও বটে যাদের উট নেই তাদের এ রকমই ভাবনা নতুবা আল্লাহ উট বানিয়েছেন তো বোঝা টানার জন্যেই, জঙ্গলের কাটা ও খড়কুটা খেয়েই উট তৃপ্ত, তুমি সওয়ার না হলে কি হবে আরেকজন সওয়ার হবেই পদচারী বললো, সে যাক, উটটি কিন্তু বেশ ভালো, নাদুস- নুদুস আল্লাহ তোমাকে মাফ করুক ভাই, উটের বোঝা দুটি কিন্তু অনেক ভারী বলে মনে হচ্ছে বস্তা দুটোতে এমন কি বোঝাই করেছো? সওয়ারী বললো, একটিতে গম জমি থেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি আর অন্যটি ভর্তি করেছি বালি আর মাটির ঢেলা দিয়ে,

 পদচালী বিস্ময় প্রকাশ করে বললোঃ কি বললে? বালি আর মাটির ঢেলা ওসব কেনো বাড়ি বয়ে নিচ্ছো? তোমার বাড়িতে কি ওসবের কোন অভাব আছে?
 সওয়ারীঃ মাটির ঢেলা কোন কাজের জন্য নিচ্ছিনে, গম এক বস্তার বেশী ছিলো না বলে তা উটের পিঠে আটকানো যাচ্ছিলো না তাই আরেক বস্তা ভর্তি করলাম মাটি দিয়ে যাতে উটের পিঠে দু’পাশ থেকে বস্তা দুটি ঝুলে থাকে মাঝাখানে আমি চড়ে বসেছি,

পদচারী এ জবার শুনে হাসিতে ফেটে পড়লো বললো, আজব বুদ্ধি আবিষ্কার করেছো একেবারে বুদ্ধির ঢেঁকি আরে ভাই এর চেয়ে ভালো হতো না যদি গমগুলোকে দুই বস্তায় সমান করে ঢেলে নিতে তাহলেই তো যুৎসই হতো এতে বস্তা ওঠানো নামানো যেমন সহজ হতো, উটের কষ্টও কম হতো,

 এই গ্রাম্য আরব লোকের বুদ্ধি-সুদ্ধি আসলেই কম ছিলো, পথচারী সঙ্গীর কথা শুনে বলে উঠলো, বাহবা, সুন্দর বুদ্ধিতো তোমার মত চিন্তা ফিকির করেও আমার বুদ্ধি এতদূর পৌঁছায়নি বোঝা যাচ্ছে তুমি একজন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও মহাপুরুষ,
পদচারীঃ না, না, ওসব কিছু নিই, তবে ভাই এটাতো খুব সহজ হিসাব,
সওয়ারীর মন কিন্তু নরম হয়ে এসেছে ভাবলো, এই জ্ঞানী লোকটিকে উটের পিঠে চড়ানো মন্দ হবে না খানিকক্ষণ চিন্তা করে জিজ্ঞেস করলো, হে জ্ঞানী মাহাপুরুষ, আসলে তুমি কে? এতো জ্ঞান বুদ্ধি যেহেতু আছে সেহেতু নিশ্চয়ই তুমি কোন উজির-নাজির আমীর-ওমরাহ হবে নিশ্চয়ই কোন মহাপুরুষ তুমি, 
পদচারী বললো, না ভাই, আমি অন্যদের মতো একজন সাধারন পথিক বিদ্যাবুদ্ধিও তেমন কিছু নেই আমার, অবস্থাতো দেখতেই পাচ্ছো, পোষাক-আশাকও সাধাসিঁধে অন্যসব মানুষের মতো সওয়ারী বললো,না, তা মোটেই হতে পারে না এতোসব আক্কেল বুদ্ধি দিয়ে নিশ্চয়ই বহুধন সম্পদের মালিক হয়েছো শুধু সখে সখে পায়ে হাটছো সুখি ও মুক্ত মানুষ তো, চিন্তা ভাবনার বালাই নেই দেখো দিখিন কতো সহজে গম বোঝাই করার এতো বড় সমস্যা সমাধা করতে পারলো,

পদচারী একথা শুনে বললো, প্রকৃত কথা হলো ভাই এই ইহজগতে আমার কানাকড়ি অর্থও নেই এই যে এখন তোমার সাথে সাথে চলছি দেখতে পাচ্ছো, অথচ জানি না আগামীকাল আমার ভাগ্যে কি আছে কি কাজ করবো আর কিইবা খাবো!

সওয়ারী জবাব দিলো হয়তো দোকান পাট আছে, যন্ত্রপাতি আছে কিংবা নগদ অর্থ না থাকুক ধনসম্পদ আছে আসল কথা হলো জ্ঞানী লোকের ক্ষমতাও আছে ধনসম্পদ ও ভাগ্য জ্ঞানীদের থাকেই কথায় বলেঃ জ্ঞানী যে ধনী সে’’
পদচারী বেচারা বললো, তাও নয় দোকান থাকলেতো তাতেই বসতাম, কারবার করতাম এই মরু বিজনে পায়ে হাটার কোন দরকারই ছিলো না 
সওয়ারী বললো, বুঝতে পারছি তুমি নিজের পরিচয় ‍দিতে চাও না হয়তো বা তোমার অসংখ্য উট, গরু ও ভেড়া-বকরী রয়েছে, এখন রাখাল খোঁজ করতে চলেছো সেযাই হোক তোমার মতো জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মানুষের ভাগ্য নিশ্চয়ই সর্বোত্তম 

পদচারী মন খুলে জবাব দিলো, আসলে কি জানো ভাই, আমার গরু-ঘোড়া, উট-গাধা, ভেড়া-বকরী, দোকান-পাটও অর্থকড়ি কিছুই নেই তবে একেবারে বদবখত নই কিন্তু দুনিয়াবী কোন সহায় সম্পদ আমার নেই আমার স্বাস্থ্য বেশ ভালো কাজ করি, রুজি-রোজগার করে খাই আজ কাজ নেই, বেকার তাই সামনের শহরে যাচ্ছি কাজের খোঁজে তুমি যে জ্ঞান ও বুদ্ধির কথা বলছো তা আমার যৎসামান্য সাধারণ জীবন পরিচালনা ব্যতীত আর কিছুই দিচ্ছে না ব্যস, আর কিছুই না

সওয়ারী তাজ্জব হয়ে বললো, ত্র্যাঁ, তুমি দেখছি একেবারে নিঃস্ব ফতুর মানুষ, বেশ হতভাগা মানুষ তুমি এই যে দেখেছো আমার এক বস্তায় গম আর অন্য বস্তায় মাটির ঢেলা এবং জ্ঞানবুদ্ধি বলতে কিছুই নেই তবুও তো আমার বাড়িতে দশটি উট, একশো ভেড়া ও পঞ্চাশটি গরু রয়েছে দুটি বড় বড় কৃষি জমি আছে, গমের গোলা, চাকর- চাকরানী রয়েছে সবাই ইজ্জত সম্মান করে জুতা, কাপড়-চোপড় আর দশ বারো কামরার বাড়ি আছে কোন সভা-সমিতিতে গেলে মানুষ উঠে দাড়ায়, সালাম জানায় আরামের নিশ্চিন্ত জীবন কাটাচ্ছি শহরের জন্য কল্যাণ সমিতির মেম্বার আমি, আমার বাড়ির একটি কামরা শুধু পুরানো আমলের পাণ্ডুলিপিতে ভর্তি, পাড়ার মোল্লা সুন্সী তা দেখে ঈর্ষা করে আর এসব কিছুতো আমার এই অল্প বুদ্ধি দিয়েই করেছি অথচ তুমি গম বোঝাই করার এতো কঠিন হিসেবটি সহজে সমাধান করার মতো এতো বেশী জ্ঞানবুদ্ধি মাথায় রেখেও একেবারে নিঃস্ব ফকির? তাহলে এতোসব জ্ঞানবুদ্ধি ও লেখাপড়ার ফায়দা কি? জ্ঞানবুদ্ধির অর্থ যদি এই যে, ফালতু খেয়াল খুশীমতো যেদিকে মন যায় সেদিকেই নির্ভাবনায় হেঁটে হেঁটে হেলেদুলে চলবো তাহলে সত্তর বছর মুর্খ নাদান থাকলেও উত্তম, আসলে আমার কৃষিজমিতে শ্রমিকের প্রয়োজন কিন্তু তোমাকে নিতে আমার বড়ই ভয় হচ্ছে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও, তোমার পোড়া কপাল হয়তো আমার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে, ফলহীন বুদ্ধি অভিশাপ’’ পদচারী বললো, ঠিক আছে, আমি অন্যপথেই যাবো তবে তুই ব্যাটা যা কিছু বলেছিস তাতে আমার দৃষ্টিতে তুই এক আহাম্মক বেআক্কেল ও হতভাগা বৈ আর কিছুই নই, এতোসবের কথা যা উল্লেখ করেছিস সবই টাকা দিয়ে কিনেছিস, নতুবা তুই নিজে এক গর্ধভের বেশী আর কিছুই না, আমি কখনো তোর মতো গাধা গরু হতে চাইনে, একথা বলেই পদচারী ভিন্ন পথ ধরে দূর হয়ে গেলো, ঘটনাচক্রে উট সওয়ারী যখন কিছুদুর পথ চললো অমনি বিপরীত দিকে থেকে দুই ঘোড়া সওয়ারের দেখা পেলো, ওরা ছিলো ডাকাত তাকে দেখেই ডাকাতেরা জিজ্ঞেস করলো, বল ব্যাটা উটের বোঝায় কি নিচ্ছিস?
সওয়ারী চাষা জবাব দিলো, এই কিছুক্ষণ আগেও আমার সাথে এক সঙ্গী ছিলো সে বলে গেলো আমি নাকি এক বুদ্ধিহীন হতভাগা হয়তো বা তাই, তাহলে হতভাগার উটের বোঝাতেও বুঝতেই পারছো কি থাকবে! 
ডাকাতদের একজন চাকু বের করে বস্তা দুটি একটি এক ঘায়ে কেট ফেললো ঘটনাক্রমে বস্তাটি ছিলো বালি আর মাটির ঢেলার এসব দেখে ডাকাতের দল সওয়ারীকে উটের ওপরই কয়েকটি লাথি লাগিয়ে সামনের দিকে চলে গেলো, যাওয়ার সময় বলে গেলোঃ আসলেই তুই এক গাধা মরুভুমি ঢেলাবালিতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে, অথচ তুই কিনা উটের ওপর এসব বোঝাই করেছিস ব্যাটা গরু কোথাকার!

ডাকাতের দল চলে যেতেই আরব চাষী তার গমের বস্তা হাতছাড়া না হওয়াতে হাসিতে ফেটে পড়লো আনন্দ উল্লাসে বলতে লাগলো, এরকম বোকামী হাজার ভালো, জিন্দাবাদ এ বোকামী, বোকার মতো বালি আর ঢেলা বোঝাই না করলে আমার কষ্টের উপার্জন গমের বস্তাই ডাকাতের হাতে পড়তো’’

এরপর থেকে মানুষ সব সময়ই দেখতে পেতো এই আরব চাষী একশো উট বোঝাই করলেও এক পাশের বস্তায় গম ও অন্য পাশে বস্তায় ঢেলা বালি বোঝাই করছে, কারো উপদেশই মানতো না কারো বুদ্ধি পরামর্শে কান দিতো না, মানুষ তার বুদ্ধির বহর দেখে হাসি-তামাশা করলে জবাবে সে বলতো আমি এমন কিছু জানি যা তোমরা জান না’’

মানুষ সবসময়ই এই চাষী বেচারাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো কিন্তু সে তার এই জ্ঞান নিয়েই খুশী ছিলো, যে, সে এমন কিছু জানে যা অন্যরা মোটেই জানে না (মসনবীর গল্প ৪৮পৃষ্ঠা)

বিভক্তির রাজনীতিঃ বহুদিন আগের কথা তখন ছিল গরমকাল একদিন এক মত ও এক পথের তিন ব্যক্তি এক সাথে শলাপরামর্শ করে ঠিক করলো, কয়দিনের জন্য তারা কোন এক গ্রামে যাবে আর সেখানে ফলমূলের বাগানে ঘুরে ফিরে মনের সুখে দিনগুলো কাটিয়ে দেবে, তিনজনের একজন ছিলো ভবঘুরে ফকির-মাথায় তার দরবেশী টুপি দ্বিতীয়জন ছিলো বেশ-ভূষায় মোল্লা-মুনশী, মাথায় তার সাদা পাগড়ি আর তৃতীয়জন ছিলো সৈয়দ বংশীয় আলেম তার গায়ে সবুজ শাল, মাথায় সবুজ পাগড়ী, সৈয়দদের যা নিশানা, এই তিনজনরেই অভ্যাস ছিলো মানুষের ঘরে ঘরে ধরণা দিয়ে বিনা পরিশ্রমে খাওয়া-দাওয়া করা ও অলস অকর্মন্যভাবে দিনকাল কাটিয়ে দেয়া,

  যেমন পরামর্শ তেমন কাজ, তারা তাদের শহর ছেড়ে রওয়ানা দিলো গ্রামের দিকে, চলতে চলতে শেষ পযন্ত পৌঁছে গেলো এক সবুজ শ্যামল গ্রামে, তারা গ্রামে হেঁটে হেঁটে পরখ করতে লাগলো গ্রামে অনেক ফলের বাগান, বাগানের গাছে গাছে কাচা-পাকা আপেল, নাশপাতি, আনার, আঙ্গুর, আরো কতো রসে টসটস ফল ঝুলছে একটি বাগানের গেট খোলা ও জন শূন্য দেখতে পেয়ে তারা ঢুকে পড়লো তাতে বাগানের ভেতরেও কাউকে দেখতে না পেয়ে সোজা চললো পাকা পাকা ফল গাছের দিকে তিনজনেই লেগে গেলো ফল ছিড়তে প্রত্যেকেই যারযার পকেট ভরে ফল নিয়ে বসলো একটি গাছের ছায়ায় এবার শুরু হলো তাদের ফল খাওয়া, গল্প-গুজব আর হাসি-তামাশা,
 প্রায় দুপুরের দিকে বাগানের মালিক শাবল হাতে জমি জমার কাজ শেষে ফিরলো বাগানে, বাগানে ঢুকেই দেখলো তিনজন অজানা অচেনা অনাহূত মেহমান, মেহমান তিনজন বেশ আরামেই গল্প-গুজবে ও ফল খাওয়ায় মশগুল,
বাগানের মালিক ছিল একজন কৃষক, ব্যাপার ধেখে তার মেজাজ একেবারে তিরিক্ষি হয়ে গেলো, শীতের সময় রাত দিন খেটে গাছগুলোতে সে অতিকষ্টে পানি সরবরাহ করেছে এ জন্যে যে, এই ফলের মওসুমে ফল পাবে ও তা বিক্রয় করে সংসার চালাবে সে যখন দেখলো, এরা তাকে দেখেও নিশ্চিত নির্ভাবনায় গল্প-গুজবে ব্যস্ত, তখণ তার মেজাজ আরো গেলো বিগড়ে, একবার ভাবলো তাদের সামনে গিয়ে চেচামেচি ও বকাবকি করে ঝাল মেটাবে ও বাগান থেকে ঘাড় ধরে বের করবে কিন্তু মনে মনে ভাবতে লাগলো এরা যদি সাধারণ মানুষই হবে তবে তো বিনা অনুমতিতে কারো বাগানে ঢুকতো না ফলও খেতো না, আর এসব আলেম-ওলামা ও ওলী দরবেশের পোশাক পরে এহেন কাজের মাধ্যমে বদনামীর ভাগী হতো না, এদের কাযকলাপে মনে হচ্ছে এরা বেহিসেবী অলস অকর্মণ্যের দল, বিনা পরিশ্রমে পরের মাল খাওয়া এদের অভ্যাস হয়ে পড়েছে তাই এদের কোন ভালো কথা বলে মানুষ করা যাবে না 
এভেবে কৃষক কি করা যায় সে উপায় খুঁজতে লাগলো মনে মনে বললো, আমি একা মানুষ আর ওরা নাদুস-নুদুস তিনজন এবং একেবারেই বেপরোয়া ওদের কাছে প্রতিবাদ করতে গেলে হয়তো কথা কাটাকাটি ও মারামাটি শুরু হবে তিনজনের থাকে একা পারা যাবে না তাই সবচে ভালা হবে কৌশলে এদের মধ্যে বিরোদ ও অনৈক্য বাধানো, আর এক এক করে ওদের বারোটা বাজানো এ চিন্তা করেই মালিক তার পরিকল্পনা আটলো হাতের শাবল মাটিতে রেখে গাছ থেকে এক থোকা আঙ্গুর পাড়লো এরপর হাসি মুখে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো তাদের সামনে এবং বললো সালামু আলাইকুম, বাবারা! খোশ আমদেদ ভালো আছেন তো? 
ওরা সালামের জবাব দিলো তবে যেহেতু জানতো যে ওদের কাজটি বড্ড অন্যায় কাজ হয়েছে তাই কৃষকের এমন সুন্দর ব্যবহারে তাজ্জব হলো তারা বুঝে ওঠতে পারছিলো না যে কি করা যায়, তাদের কথা বলার আগেই কৃষক এগিয়ে তাদের কাছে সে বসলো এবং নিজের কথা রেশ ধরেই বললো, আশ্চযের বিষয়, আজ আমি একেবারে একাকী ছিলাম একাকী মেজাজ সত্যিই খারাপ হয়ে যায়, আল্লাহর মেহেরবানী আপনাদের তিনি ঠিক সময়েই পাঠিয়েছেণ, কথাবার্তায় সময়টা বেশ আনন্দেই কেটে যাবে তো বাবারা, সবাই ভালো আছে তো? শহর থেকে এসেছেন বুঝি? 
তারা জবাব দিলো, আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই ভালো আমরাও চাচ্ছিলাম আপনার সাতে দেখা করবো, একাকী আমাদেরও তেমন ভাল লাগছিলো না, শহর থেকে গ্রাম দেখতে এসেছি,
মালিকঃ বেশ করেছেন, স্বাগতম শহরের মানুষ আপনারা আপনাদের দেখলে মন জুড়ায় নিন পাকা আঙ্গুর খান খুব ভালো জাতের আঙ্গুর এটি কিন্তু এভাবে তো আপনাদের আপ্যায়ন করা যায় না বিছানা পত্র, ফরাশ-গালিচা কিছুই সাথে নেই দেকছি, এতে আরাম পাবেন না এভাবে মেহমানদারী হয় না এখানে গালিচা বিছিয়ে আরামের সাথে বসা উচিত কথা বলায় সময় বুঝতে পারলো যে, তিনজনের মধ্যে সুফী-দরবেশের পোশাকধারী লোকটির মাথায় তেমন ঘিলু নেই, বুদ্ধিশূন্য হাবা তার দিকে তাকিয়ে বললো, বাবারে, আমি খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তুমি একটি কষ্ট করো, ঐ যে দেখছো, ঐ দিকে বাগানের শেষ মাথায় একটি ছোট্টঘর আছে, এর ভেতর একটি গালিচা দেখবে নিয়ে এসো  

কৃষকের কথায় ফকির বেচারা ওঠে দাড়ালো এবং নির্দেশিত দিকে চলে গেলো এ সময় বাগানের মালিক মোল্লাও সৈয়দের কাছাকাছি মুখ নিয়ে বললোঃ ভাইয়েরা আমার আমি আপনাদের দু’জনকে খুব ইজ্জত করি আপনাদের একজন হলেন গিয়ে মোল্লা, এলেম-কালাম জানেন, মসজিদ-মিম্বরের মানুষ, আরেকজন তো সৈয়দ, আউলাদে রাসূল আপনাদের পায়ের ধুলি আমার চোখের সুরমার সমান কিন্তু ঔ যে ফকির বেশধারী, সে তো মনে হয়ে একেবারে আলসে অকর্মণ্য অপদার্থ লোক তাকে সাথে রাখা কি আপনাদে মানায়? তাকে কি কারনে আপনাদের সঙ্গী করেছেন? বিনা পরিশ্রমে খাওয়া ছাড়া তার কাজই বা কি? আমার ওপর তার কোন অধিকার নেই, সে না থাকলে আপনাদের দু’জন সম্মানিত মেহমান এখানে সপ্তাহ খানেক কিংবা ইচ্ছে করলে যতদিন খুশি বেড়িয়ে যান, আমি আপনাদের খেদমত করতে পারলে ধন্য মনে করবো, তবে এই বেকার অপদার্থ ফকীরকে আমি এখান থেকে তাড়াতে চাই এরপর আমরা যতখুশী আমোদ প্রমোদ করবো কি বলেন? বাগান মালিকের মন্ত্র তাদের ওপর প্রভাব ফেললো দু’জন দেখলো যে প্রস্তাবটা মন্দ নয়, তাই জবাব দিলো, জ্বী জনাব, আপনার কথাই ঠিক আমরাও এই দরবেশকে নিয়ে বেশ বিরক্ত, বেচারা নিজে নিজেই আমাদের সাথে বলপূর্বক জুটে গেছে, এখন ফিরে এলে আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন আমরা কিছুই বলবো না’’

বাগান মালিক বললো, ঠিক আছে ব্যবস্থা আমিই করবো, ফকির গালিচা নিয়ে ফিরে আসতেই মালিক বললো, দেখো ফকীর বাবা, এই সৈয়দ ও মোল্লার সাথে আমার অনেক আগের পরিচয় ও জানাশুনা, তারা এখানে আমার সম্মানিত মেহমান কিন্তু আমি ফকীরগোষ্ঠীকে মোটেই সহ্য করতে পারি না, খুব বিরক্ত লাগে তোমাদের দেখলে, তাই বলছি তুমি তোমার নিজের চিন্তা কর নিজের পথ নিজেই দেখো এই কয়টা আপেল নিয়ে যাও বাবা, রাস্তা মাপো, আল্লাহ তোমার রিজিক অন্য কোথাও রেখেছেন খোদা হাফেজ বাবা,

ফকীর বুঝতে পারলো বাতাস উল্টো বইছে, তাই বন্ধুদের প্রতি তাকিয়ে দেখলো তারা সবাই মাথা নিচু করে আছে ও চুপচাপ, কেউ কিছুই বলছে না বাধ্য হয়েই মাথা নাড়লো এবং তাদের লক্ষ্য করে বললো,‘‘ বেশ ভালো কথা, আমি যাচ্ছি, বুঝা গেলো যে তোমরা সবাই একহাত হয়েছো, ‍কিন্তু আমি যা দেখতে পাচ্ছি এ বিশ্বাসঘাতকতার জন্য এই বাগান মালিকের কাছ থেকে সুখ পাবে না’’

 মোল্লা ও সৈয়দ বিরক্ত হয়ে বললো,‘‘ তোর মাথা ঘামাতে হবে না ব্যাটা তুই কেটে পড়’’
ফকীর পথ চলা শুরু করলো ও বাগান থেক বেরিয়ে গেলো বাগান মালিক দেখলো যে তার বুদ্ধি বেশ কাজে লেগেছে, সে মেহমান দু’জনকে বললো, বাবারা একটু অপেক্ষ করুন, আমি বাগানের দরজাটা বন্ধ করে আসি এই বলে সে দৌড়ে ছুটলো দরজার দিকে, পথে একটি মোটা লাঠি নিতে ভুললো না, বাগান থেকে বেরিয়েই দেখতে পেলো ফকির বেচারা এদিক সেদিক উদ্দেশ্যহীনভাবে তাকাচ্ছে ব্যস, তার কাছে গিয়ে বললো, এই বেইনসাফ লজ্জা-শরম কি খেয়ে ফেলেছিস যে, মানুষের বাগানে বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়িস ও যা পাস তাই খাস, কোন পীর-মুর্শিদ তোকে এ অনুমতি দিয়েছে যে, অন্যের মাল খেতে পারবি অতি সত্বর এখান ধেকে দূরহ, নইলে গ্রামের মানুষ ডেকে এমন দশা ঘটাবো যে, জীবনে কখনো ভুলবিনে এ কথা বলেই হাতের লাঠি দিয়ে ইচ্ছে মতো ফকিরের খেদমত করলো বেচারা মারের চোটে শেষ পযন্ত উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালালো,
ফকিরের কাজ শেষে বাগান মালিক ফিরে এলো, বাগানে এবং সহাস্যে বললো, ইনশাআল্লাহ মাফ করবেন ফকিরের চেচামেচি হয়তো শুনেছেন আমি আসলে তাকে মারতে চাইনে, কিন্তু আমাকে দেখেই সে কিনা গালাগালি শুরু করলো তাই তাকে কিছু সবক দিতেই হলো কিছু মনে করবেন না, যাক আপদ দূর হলো এখন তিনজনে বেশ ভালোই কাটবে, এবার কৃষক বসে বসে গোঁফে তা দিতে লাগলো আর ভাবতে শুরু করলো, এখনো এরা দু’জন আমি একা দু’জনের সাথে পারবো না, এ ভেবেই কথাবার্তা ও গল্প জুড়ে দিলো আর মনে মনে ফন্দি আঁটতে লাগলো দুপুর গড়িয়ে আসতেই কৃষক বললো, এখন দুপুর গড়িয়ে গেছে এবার খানা পিনার বন্দোবস্ত করা দরকার,
সৈয়দ ও মোল্লা বললো চাচাজান, খানার কোন প্রয়োজনই নেই আমরা যথেষ্ট ফল খেয়েছি, একেবারে পেট ভর্তি আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনে এখন আসলে দুপুরে খানা না খেলেই ভালো’’

বাগান মালিকঃ ‘‘না না, মোটেই নয় এ হতেই পারে না সামান্য দু’লোকমা ডাল ভাত খেতেই হবে আপনারা আলেম-ওলামা মানুষ আপনাদের খেদমত করতে পারলে অনেক সওয়াব, খেতেই হবে’’

এরপর সৈয়দের দিকে তাকিয়ে সে বললো, বাবা সৈয়দ আপনার পূর্বপুরুষ রাসূলের দোহাই, একটু কষ্ট করুন আমার বাড়ি কাছেই, বাগান থেকে বেরিয়ে দু’এক বাঁকমোড় নিলেই আমার ঘর, ঘরে গিয়ে বললেন, আমাদের খানা এখানে এ বাগানে খাবো, আপনার কাছে যেনো দিয়ে দেয়, ঘরে দুপুর বেলা কোন শান্তি নেই, বাচ্চাদের দুষ্টুমীতে খানাদানার পর একট বিশ্রাম নেয়ার ও চোখ বন্ধ করার কোন সুজোক নেই আজ আপনাদের সাথে এখানে খেয়ে দেয়ে একটু আরামে গাছের ছায়ায় ঘুমুবো যান বাবা, আপনি বয়েসে ছোট তাই আপনাকেই বিরক্ত করছি তা ছাড়া সৈয়দ মানুষ, পর হলেও আপন যান বাবা, গিয়ে আমার গিন্নীকে বলবেন, তিনজনের খানা যেনো পাঠায় ডাল ভাত যা হোক আলেম-ওলামাদের সাথে একত্রে খেয়ে সওয়াব পাবো, বাগান থেকে বেরিয়ে বাম দিকে পথ ধরে যাবেন, পাড়ায় ঢুকে দ্বিতীয় গলির ডান পাশের চার নম্বর ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বলবেন, বাগান থেকে এসেছি,
বাগান মালিক জানতো যে, ঠিকানা মতো ঘরে কেউ নেই
 যাক সে কথা সৈয়দ তার সবুজ শাল গায়ে জড়িয়ে ও মাথায় সবুজ পাগড়ি বেধে রওয়ানা হলো খানার সন্ধানে, এরপর বাগান মালিক বসলো মোল্লার সামনা সামনি এবং বললো, দেখো ভাই, একজন ভালো ও সৎ মানুষের কয়েকদিন মেহমানদারী করার ব্যাপারে আমরা কোন আপত্তি নেই কিন্তু ইনাসাফ বলে একটা কথা আছে, আমি একজন মেহনতি কৃষক আপনিও একজন পরিশ্রমী আলেম, নামাজ রোজার মসলা মাসায়েল মানুষকে শিক্ষা দেয়া বহু কষ্টের কাজ সুতরাং মেহনতি আলেম হিসিবে আমর ওপর আপনার নিশ্চয়ই হক আছে, আমি আপনার খেদমত করতে পারলে ধন্য হবো, আখেরাতে ফায়দা আছে কিন্তু এই যে যুবক, বাপ দাদার সৈয়দ নামের নিশানা হিসেবে সবুজ শাল গায়ে জড়ানো ছাড়া তার আর কি গুণ আছে? সে মানুষের কি উপকার করছে যে এভাবে পরের ঘরে খেয়ে বেড়াচ্ছে? তা ছাড়া আসলেই সে সৈয়দ কিনা তাই বা কে জানে, হয়তো বা সবুজ শাল তার মিথ্যা পোষাক এরাই পয়গম্বর ও আওলাদে রাসূলের বদনাম করছে, পয়গম্বর কোথায় বলেছেন যে, তার বংশধর বিনামূল্যে পরের ঘরে পরের মাল খাবে? আসলে এটা এসব অপদার্থদের একটি পেশা মাত্র, এসব ছোট লোকের সাথে আপনার মতো বিরাট আলেমের দোস্তি ঠিক নয়, মানুষ আপনাকেই শেষ পযন্ত সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করবে, তাই এসব অপদার্থ যুবক ছোকরাদের সঙ্গ ছাড়াই উত্তম, যাক আমার কথা হলো সৈয়দ নামধারী ফিরে এলে তার সাথে ক’টা কথা বলবো আপনি চুপচাপ থাকবেন তার সাথে আমাদের হিসেব চুকে ফেলতে হবে তাকে পাঠাবো তার পথে সে চলে গেলে আপনি আমাদের সাথে এই গ্রীস্মকালটা এখানেই কাটিয়ে দেবেন এখানে বেশ ভাল কাটবে আপনার এমন সুশীতল আবহাওয়া শহরে পাবেন না, আমি আপনার কাছ থেকে এ সুযোগে দ্বীনি মসলা মাসায়েল শিখবো, আমার ছেলেমেয়েরা ও আপনার কাছ থেকে আরবী ফারসী শিখতে পারবে আপনারও এই মওসুমটা বিশ্রামে কেটে যাবে, আপনি আমাদের মেহমান হলে আমাদের অনেক উপকার হবে, আপনার খেদমত করা গ্রামবাসীদের ওপর ফরজ, তবে ঐ সৈয়দ ছোকরাকে আমার মোটেই পছন্দ হয় না তাকে তাড়াতেই হবে সে কোন অধিকারে আমার বাগানও সংসারে ভাগ বসাবে?
মোল্লা বাগবানের কথায়, একমাস বিনা কাজে বসে খাওয়ার লোভ সামরাতে পারছে না তাই বললো, আসলে আপনার কথাই ঠিক কিন্তু ব্যাপার হলো 
বাগান মালিকঃ কোন কিন্তু নেই, আপনাকে কিছুই বলতে হবে না, আমিই সব ঠিকঠাক করবো ওদিকে সৈয়দ বেচারা গ্রামের পাড়ায় গিয়ে ঠিকানা মতো দরজায় গিয়ে দেখলো কেউ নেই তাই খালি হাতে ফিরে এলো বাগানে, বললো, ঘরে কেউ নেই’’
বাগান মালিক তার কথা লূফে নিয়ে বললো, তুমি একজন অপদার্থ মানুষ বাপু, কোথায় কার বাড়িতে ঘুরে এসেছো যাক সে সব কথা, আসলে তুমি নামেই সৈয়দ, কাজে কর্মে এক্বেবারে উল্টো, তোমার মতো লোক ক্ষতিকরও বটে, জনাব মাওলানার মাথে আমার পুরানো দোস্তি ও আত্মীয়তার কথা এতক্ষণ আমরা খুজে বের করেছি কিন্তু তুমি আমাদের আরাম-আয়েশের সময়টা নষ্ট করো না যাও বাপু, ঐ আঙ্গুরের ঝুড়িটি তোমার, এটা নিয়ে যত শিগগির এখান থেকে বিদায় হও এই রকম অপদার্থ কুঁড়ে মানুষ আমার মোটেই সহ্য হয় না, জলদি যাও, আমরা এখন কথায় ব্যস্ত আছি,
সৈয়দ মোল্লার দিকে তাকালো, দেখলো মোল্লা মাথা নুয়ে মুখ বন্ধ করে আছে কোন কথা বলছে না, সে বুঝতে পারলো যে বাগবান তার উদ্দেশ্য সফল করেছে, তার কুমন্ত্রণা মৌলভীর ওপর প্রভাব ফেলেছে তখন মুখফুটে বললো, হযরত মাওলানা! এটাই কি বন্ধুত্বের পরিচয় যে, এক সাথে আসবো আর একা বিদায় হবো? তোর কপালেও মন্দ রয়েছে,
মোল্লাঃ আমার বলার কি আছে! বাগান কি আমার?
বাগবানঃ হ্যাঁ ব্যাটা দেখছি কথা বাড়াচ্ছে বাগান আমারও মাওলানা সাহেবও আমার মেহমান, আমার হুযুর, তিনি একেবারে পীর-মুর্শিদ এতে তোর বলার কিছু নেই তুই ব্যাটা প্রথমেই অন্যায় করেছিস, কে তোকে দাওয়াত করেছে যে এখানে তশরিফ এনেছিস? এখন কথা না বাড়িয়ে জলদি বের হয়ে যা, নইলে আমিই জানি তোর কি গতি হবে,
সৈয়দঃ ঠিক আছে আমি যাচ্ছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি মোল্লার হুযুরী ও পীরগিরি আর পুরোনো বন্ধুত্ব কিছুই তার কাজে আসবে না, তার ভাগ্যেও বিপদ আছে যাক, গেলাম, খোদা হাফেজ,
বাগবার ছুটলো তার পিছু পিছু বাগান থেকে বের হতেই সৈয়দের ঘাড় চেপে ধরলো আর সেই লাঠি দিয়ে আচ্ছা করে ঝালমিটালো এবং বললোঃ বজ্জাতি করার আর জায়গা পাসনে, বিনা অনুমতিতে লোকের বাগানে ঢুকবি, মানুষের মাল খাবি এরপর কি না লম্বালম্বা কথা, উটের বাচ্চারাও উটের আকৃতি পায়, কিন্তু তোর কোন বিষয়টি পয়গাম্বরের মতো? তোর পূর্ব পুরুষ রাসূলে খোদা কি বলেছেন যে, বেকার ঘুরে বেড়াও মানুষের মালে হাত দাও ও বিনা অনুমতিতে যা পাও তাই খাও? জলদি এখান থেকে পালিয়ে যা, নইলে গ্রামের মানুষ জানতে পারলে তোর ইজ্জত-সম্মান তো যাবেই, জান নিয়ে যেতে পারবি নে, সৈয়দ লাঠি পেটা ও লাথিগুতা খেয়ে দৌড়ে পালালো,
সৈয়দ চলে যেতেই বাগান মালিক ফিরলো বাগানে, বাগানের দরজা শক্ত করে বন্ধ করলো এরপর শাবল হাতে গেলো মোল্লার সামনে বললো, জনাব মোল্লা এবার আসল কথায় আসা যাক বলো ব্যাপার কি?
মোল্লা নিরুত্তর বাগবার বললোঃ কি হলো, কথা নেই কেনো?

মোল্লাঃ কি বলবো? বাগবানঃ ব্যাপার জোচ্চোর কোথাকার, কোন অধিকারে এ বাগানে ঢুকেছিস? কার হুকুমে আপেল, আঙ্গুর ও আনারের গায়ে হাত দিয়েছিস? আমি জানতে চাই কোন কিতাবে লেখা আছে যে, মালিকের অনুমতি ছাড়া তার বাগানে বা ঘরে ঢোকা যায় আর না জানিয়ে তার মাল নেয়া যায়? একথা শরিয়তে আছে? জবাব দে, নইলে এই শাবল দিয়ে তোর বারটা বাজাবো,

হতভাগা মোল্লা এ ধরণের আপ্যায়নে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়ে, মাথায় তার কিছুই আসছে না, তাই বললোঃ কোন কিতাবেই এসব নির্দেশ নেই কিন্তু আমি তো একা আসিনি, আমরা তিনজন মেহমান এসেছিলাম আমি বুঝতে পারছি না প্রথম দিকের এত সব আদর আপ্যায়নের অর্থই বা কি, আর এখণ এসব বেইজ্জতির মানেই বাকি?
বাগবানঃ আসলে তোরা প্রথমেও তিনজন ছিলি না, যদি তিনজনই ছিলি তবে এখনো তা থাকতি তোরা প্রত্যেকেই আলাদা ও ভিন্ন ভিন্ন ছিলি, যেমন এখনো আছিস এছাড়া মেহমান কক্ষনো ছিলিনা কারণ কেউ তোদের দাওয়াত করেনি এখন আমি যা বলি তাই মানতে হবে এতো সব আদর- আপ্যায়ন, স্বাগতম সম্মান এ জন্যে ছিলো যে, আমি ছিলাম একা কিন্তু তুই আরো দুই অপদার্থকে দলে  ভিড়িয়েছিলি আর এখন এই যে অপমান বেইজ্জতি দেখছিস তা হলো এ জন্যে যে, তুই গুনাহগার অপরাধী এবং আমার হাতে এই শাবল দেখতে পাচ্ছিস যদি  কেউ নিজের বিচার নিজে না করে তাহলে অন্যরাই তার বিচার করতে বাধ্য হয় এখন কি বলবি?

মোল্লাঃ কিছুই না, বলার আর কি আছে, আসলে সত্য কথা যদি জানতে চাও তাহল শুন, আমি মোল্লা মৌলভী কিছুই নই মাথায় পাগড়ি বাকী ও কিস্তিতে কিনে এনেছি, যাতে মোল্লার নাম করে বিনা কাজে খেয়ে দেয়ে দিন কাটাতে পারি, আসলে লেখাপড়ার আলিফ বাও জানি না, কোরআন কিতাব পোতো দূরের কথা ফিকাহ শরিয়ত যে কি তার নামও শুনিনি, আমার সঙ্গী বন্ধুরা সবাই বাজে বেকার লোক মুনশি বা সৈয়দ সবই মিথ্যা কথা, এখন যা কিছু করতে চাও তার অধিকার তোমার আছে, কারণ আমি একা, খাওয়া ও একটা ভোগ করার লোভে পড়ে বন্ধুদের হারিয়েছি, তোমার বুদ্ধিই আসলে উত্তম রাজনীতি, তোমার চাল আমরা বুঝতেই পারিনি লোভের কারণে, বাগবানঃ তবে নে তোর প্রাপ্য এই বলেই শাবল দিয়ে মিথ্যা পাগড়িওয়ালাকে ইচ্ছে মতো ধোলাই করলো মারের চোটে ভণ্ড মোল্লার চিল্লাচিল্লি ও গড়াগড়ি কে দেখে শেষ পযন্ত দিকিবিদিক জ্ঞান হারিয়ে দিলো ছুট, বাগবানও তার পিছু নিয়ে মনের মতো শাবল দিয়ে ঝাল মিটাতে লাগলো অবশেষে মোল্লা বেচারা পাগড়ি লেবাসের মায়া ত্যাগ করে কোন মতে জান নিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে বাগানের দেয়াল পযন্ত পৌছেই দেয়াল টপকিয়ে পালালো, এতক্ষণে বাগান মালিকের মনের ঝাল মিটেছে, গোফে তার দিতে দিতে সে গিয়ে বসলো গাছের ছায়ায় (মসনবীর গল্প ৪০পৃষ্ঠা)


সুলতান মাহমুদের দাড়িঃ অনেকদিন আগের কথা তখন সুলতাম মাহমুদ গজনভীর আমল, সুলতান মাহমুদ রাতের বেলায় ঘুরে ঘুরে প্রজাদের খবর নিতে পছন্দ করতেন আগের দিনে আজকের মতো এতো সরকারী পাইক-পেয়াদা ও পুলিশ ছিলো না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজা বাদশাহগণ জনসাধারণের অবস্থা সম্পর্কে বেখবর ছিলেন উজির নাজির, আমীর ওমরাহ ও অন্যান্য রাজ কর্মচারীরা জনগনের ওপর জুলুম অত্যাচার করতো, ঘুষ খেতো এবং মিথ্যা খবর পৌঁছাতো

 এ কারণেই যেসব রাজা বাদশাহ জনগনের অবস্থা ভালো করে জানতে চাইতেন তারা প্রায়ই রাতের বেলায় রাজকীয় পোষাক পাল্টিয়ে গরীব মিসকিনও ভিক্ষুক-দরবেশ কিংবা নৈশ শ্রমিকের পোষাক পরে বের হয়ে পড়তেন ও ঘুরে ঘুরে শহরের অবস্থা দেখতেন বাজারে জিনিস পত্রের দাম জিজ্ঞেস করতেন, যদি কারো ঘর থেকে কান্নাকাটি ও ফরিয়াদ শুনতে পেতেন তার কারণ তল্লাশী করতেন যদি কোথাও জনতার জটলা দেখতে পেতেন ঢুকে পড়তেন সেখানে এবং খোঁজ নিতেন এছাড়া মসজিদ মাদ্রাসা, সভা সমিতি, ওয়াজ মাহফিল প্রভৃতি জনসমাবেশে ঢুকে পড়ে জনগণের সুখ-দুঃখ ও অভাব অভিযোগের খবর নিতেন জনগন কি চায় কি বলে, সরকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে কিনা সবই জনগনের মুখ থেকে গোপনে জেনে নিয়ে যথাবিহিত প্রতিকার করতেন মোটকথা তারা জনগনের অবস্থা সরাসরি জেনে নিয়ে কর্মচারীদের  সাবধান করতেন নির্দেশ জারী করতেন ও সুখ-সুবিধার ব্যবস্থা করতেন আর এভাবেই তারা দেশ থেকে অন্যায় অবিচরার দূর করে জনগনের কাছে প্রিয় ও সম্মনিত হতেন  রাজা বাদশাদের রাত্রিকালীন ঘুরাফেরার বহু কিচ্ছা কাহিনী ইতিহাসে বর্ণিত আছে আমাদের এ কিচ্ছাটিও তৎকালীন পারস্যও আফগানিস্তানের বাদশাহ সুলতান মাহমুদ গজনভী সম্পর্কে তাহলে এসো কিচ্ছাটি তোমাদের শুনাই 

একরাতে সুলতান মাহমুদ শ্রমিকের পোষাক পরে একাকী গজনী শহর পরিদর্শনে বের হলেন শীতের রাত হওয়ায় রাস্তাঘাট জনশূন্য ছিল প্রজাদের ঘরবাড়ির দরজা বন্ধ, রাস্তায় কদাচিত ফকীর-মিসকিন, পথচারী বা কুকুর দেখা গেলো বাদশাহ ইচ্ছে করলেন শহরের আশেপাশের এলাকাও একবার ঘুরে দেখবেন এবং পাহারাদার দারোগা ও কতোয়াল ঠিকমতো কাজ করছে কিনা খোঁজ নেবেন সুলতান মাহমুদ এক শূন্য ময়দানে এসে উপস্থিত হলেন হঠাৎ দেখতে পেলেন চার পাঁচজন লোক জটলা বেধে ফিসফিস করে কথা বলছে সুলতান মাহমুদ তাদের পাশ দিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে তারা তার পথরোধ করে দাঁড়ালো এবং বললো, দাঁড়াও দেখি, কে তুমি? কোথায় যাচ্ছো?

সুলতান মাহমুদ জবাব দিলেন বাবা, আমিও তোমাদের মতোই মানুষ তোমাদের সাথে আমার কোন কাজ নেই তোমাদের কাজে আমি নাক গলাবো না, তোমরা অযথা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করো না, চারজনের একজন বললো, বেশ ভালো কথা আমাদরে কথা বলার সময় নেই পকেটে কতো টাকা আছে দেখি? সুলতান মাহমুদ হাসলেন ও বললেন  যদি পকেটে টাকাই থাকতো তাহলে এ রাতে শহরে না বেরিয়ে ঘরে বসে শান্তিতে ঘুমাতাম আমি এখন টাকার খোঁজেই বের হয়েছি কিন্তু আমার কাজে তোমাদের কি? ওরা বললো, বাহবা, তুইও দেখছি আমাদেরই মতো, বেশ ভালো কথা দেখা যাক, যদি চালাক চুতুর হয়ে থাকিস তাহলে আমাদের সঙ্গী হতে পারিস, আমরাও এখন একই ফিকির করছিলাম যে, টাকা কোথায় মিলবে? বুঝতেই পারছিস আমরা বেকারের দল রুটিরুজী নেই, কোথায় চুরি করা যায়, এ নিয়েই আমাদের শলা পরামর্শ, তবে কাজটি বড়ই কঠিন দেয়াল টপকাতে হবে, সিদ কাটতে হবে, দরজা জানালা কলাকৌশলে খুলতে হবে, সাড়া শব্দ করা যাবে না, পালানোর পথও খোলা রাখতে হবে ইত্যাদি, ঘরের মালিক জেগে যেতে পারে, তার ডাকে পুলিশ চৌকিদার ছুটে আসবে বড়ই বিপদ ও মুশকিলের কাজ এটি, মোটকথা অনেক সাহস ও বুদ্ধির দরকার তোর এসব কিছু আছে কি? সুলতান মাহমুদ জীবনে আর কখনো এ ধরনের চোর বাটপারের সঙ্গ পাননি তার সখ জাগলো ওদের সঙ্গী হতে, কারণ এদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা দরকার তাই জবাব দিলেন, কি করতে পারবো বলতে পারছি না আগে কখনো এ কাজ করিনি, তবে আমাকে যদি নিতে চাও আমি সঙ্গে থাকতে রাজী, সাহায্য করবো আর নিতে রাজী না হলে নিজের পথেই এগিয়ে যাবো, চোরের দল বললো না, এ হতে পারে না এখণ যেহেতু তুই আমাদের চিনে ফেরেছিস তোকে ছেড়ে দিতে পারি না হয়তো বা পুলিশ চৌকিদারদের গিয়ে খবর দিবি আর ওরা ছুটবে আমাদের পিছু তোর হাত পা বেঁধে দূরে এক জায়গায় ফেলে রাখবো যাতে কেউ তোর খবর না পায়  যদি আমাদের সাথে যেতে চাস  তাহলে এমন কোন কাজ জানা থাকতে হবে যা আমাদের কাজে লাগবে, তা না হলে এমন নাদুস নুদুস শরীরের শরীক লোক দরকার নেই আমাদের অনর্থক ভাগ বসাবি আমাদের মালে, মাহমুদ বললো, আজব বিপদেই না পড়লাম ঠিক আছে, ‍কি কাজ জানা থাকলে চলবে? তোমাদের তো কারখানা নেই যে দক্ষ কারিগর দরকার হবে তোমাদের কাজ হলো দেয়াল টপকানো, সিঁদ কাটা, বেড়া কাটা ও মানুষের মাল নিয়ে পালানো এ কাজে সাহায্য করতে আমার অসুবিধা হবে না চোরের দল হাসলো এবং বললো , এতো সহজ মনে করিস না আমাদের প্রত্যেকেই কোন না কোন ফন্দী ও বুদ্ধি জানি আর এসবের মাধ্যমেই নিরাপদে কাজ সেরে আসি মাহমুদ জিজ্ঞেস করলেন, সে আবার কেমন? তাহলে খুলেই বলো একজন বললো, আমার বৈশিষ্ট্য হলো আমার কান দুটি যখন কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ওঠে তখন জানি কি বলতে হবে চোর দেখে কুকুরের ঘেউ ঘেউ আর উপোসে ঘেউ ঘেউয়ের মধ্যে আমি তফাৎ বুঝতে পারি সুতরাং অবস্থা বুঝেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দোস্তদের জানিয়ে দেই
দ্বিতীয় চোর বললো, আমার কাজ হলো চোখে রাতের অন্ধকারেও যদি কাউকে দেখি তাহলে দিনের আলোতে সে যে কোন পোষাকেই থাকুক না কেনো তাকে চিনতে পারবো চুরির মাল কিক্রী করতে গেলে এ জ্ঞানটি কাজে লাগাই, ধরা পড়ার ভয় থাকে না মালিক চিনেই গা ঢাকা দেওয়া যায়
তৃতীয় চোর বললো, আমার কলাকৌশল আমার হাতে অনায়েসে আমি দেয়াল, বেড়া ও দালান ছিদ্র করতে পারি দরজা জানালা খোলা আমার জন্য কিছুই না কোন আওয়াজই হয় না 
 চতুর্থ চোর জানালো, আমার গুণ হলো নাকে মাটির গন্ধ নিয়েই বুঝতে পারি কোথার মাটি সোনার দোকানের মাটি কাপড়ের দোকানের মাটি বা গৃহস্থের ঘরের মাটি সবই ঘ্রাণ শুঁকে চিনতে পারি এবার পঞ্চম চোর বললো আমার গুণ আমার হাতের পাঞ্জা এ দিয়ে দেয়াল টপকানো বা ছাদে ওঠার জন্য আমি এমনভাবে রশির হুঁক নিক্ষেপ করতে পারি যে, রশির কাঁটা শক্তভাবে বিধে যায় তখন সবাই রশি বেয়ে সহজে উঠে যেতে পারি এরপর চোরের দল সুলতান মাহমুদকে জিজ্ঞেস করলো, এখণ তোকে যদি আমাদের সাথে নেই আমাদের কি ফায়দা হবে? তোর এমন কি গুন আছে যে, আমাদের কাজে আসবে? মাহমুদ একটু ভেবে বললেন, তোমাদের গুণ ও কলাকৌশল বেশ কাজের নিঃসন্দেহ কিন্তু আমি যা জানি এগুলোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তোমরা যা জানো তা চুরিতে ধরা না পড়া পযন্তই কাজে লাগে যদি পুলিশ চৌকিদার কিংবা বাড়ির মালিকের হাতে ধরা পড়ো তখন এসবের একটিও তোমাদের উপকারে আসবে না কিন্তু আমি যা জানি তা খুবই তাজ্জবের বিষয় আমার গুণ আমার দাড়ির মধ্যে তা মুক্তিদানকারী যদি কোন অপরাধী গোনাহগার পুলিশ চৌকিদার এমনকি জল্লাদের হাতেও পড়ে আমার দাড়িতে নাড়া দিলেই সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি ও মাফ, সুলতান মাহমুদের মথা শুনামাত্রই চোরের দেল খুশিতে লাফিয়ে উঠলো এবং বললো, মাশাল্লা মাশাল্লা আসলেই তোর গুন আমাদের সবার সেরা তোর দাড়ির হাযার প্রশংসা এমন দাড়ি আমাদের দরকার তুইই আমাদের রইস, আমাদের সর্দার ও নেতা হওয়ার উপযুক্ত বরং আমরা তোকে সবচেয়ে বেশী অংশ দিতেও রাজি তুই আমাদের সর্দার হলে নিশ্চিন্তে চুরি-ডাকাতি করতে পারবো আর দেরী নয়, চলো সবাই এই বলেই সবাই মিলে ডান পাশের রাস্তা ধরে চললো সামনের দিকে সামান্য পথ চলতেই এক কুকুর দেখা গেলো চোরদের দেখে কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করলো কানের গুণবিশিষ্ট চোর কুকুরের আওয়াজ শুনে জানালো, কুকুর বলছে, তোমাদের দলে একজন মহান ব্যক্তি রয়েছে চোরেরা সমস্বর বললো, আমাদের নয়া দোস্তের কথাই বলছে-তার দাড়ি যে মুক্তির দূত চোরের দল অবশেষে একটি বাড়ির সামনে গিযে দাঁড়ালো বাড়িটির দেয়াল বেশ ছোট, দলের একজন বললো, এ দেয়াল ডিঙ্গানো খুবই সহজ তার কথায় নাকের গুণবিশিষ্ট চোর বাড়ির মাটির ঘ্রাণ নিলো এবং বললো, কোন ফায়দা নেই এ বাড়ী এক গরীব বিধবা বুড়ির কিছুই নেউ, এরপর ঘুরতে ঘুরতে এক উঁচু দেয়াল বিশিষ্ট বাড়ির সামনে তারা উপস্থিত হলো হাতের কঠিন পাঞ্জার অধিকারী চোরটি তখণ দেয়াল টপকানোর রশিকে সুকৌশলে দেয়ালের মাথায় আটকে দিলে সবাই দেয়াল টপকিয়ে বাগানে ঢুকে পড়লো তার দালানের কাছে যেতেই নাকের গুণী মাটির গন্ধ শুকে বললোঃ বেশ ভাল জায়গাই খুঁজে পেয়েছি এখানে অলঙ্কার, সোনা, রূপা ও মুণ মাণিক্যের ভান্ডার রয়েছে, এরপর বাহুগুণের চোর একটি অন্ধকার ও নিরাপদ স্থান বেছে নিয়ে দেয়াল খুড়ে সিধ কাটলো সিদ বেয়ে পৌছে গেলো অলংকারাদির স্থানে এরপর যতো পারলো সোনা রূপা মনি মানিক্য ও মূল্যবান দ্রব্যসামগ্যী নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে, এরপর সবাই দলবেধে নিরাপদ ও নিঃশব্দে চলে এলো শহরের বাইরে দূরবর্তী এক পরিত্যক্ত বাড়ীতে, ঐখানে চুরির যাবতীয় মাল গর্ত খুড়ে মাটি চাপা দিলো, রাত তখন প্রায় শেষ হয়ে আসছে, সবাই ঠিক করলো, এখন সবাই যার যার আবাসে চলে যাবো এবং আগামী রাতে এসে ফুরসত মতো ভাগ বাটোয়ারা করবো তবে একজনকে দিনের বেলায় এখানে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে পাহারা দিতে হবে তারা সুলতান মাহমুদকে বললো  এ পযন্ত আমাদের কাজ নিরাপদেই সস্পন্ন হলো, যাহোক তুই কালরাতে একানে আসবি, তোর ভাগও দেয়া হবে, সুলতান মাহমুদ স্থানটি চিহ্নিত করলেন এবং চোরদের যাবতীয় গোপল তথ্যা ও রহস্য জেনে নিলেন, তিনি চোরদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে এলেন শাহী প্রাসাদে সকাল বেলা সংশ্লিষ্ট উজিরকে ডেকে রাতের সব ঘটনা খুলে বললেন, পরের সন্ধ্যায় সুলতানের নির্দেশে কয়েকজন রাজকর্মচারী ও সৈন্য যথাস্থানে সময়মতো হাযির হয়ে ‍চুরির ধনসম্পদসহ চোরদের হাতেনাতে ধরে নিয়ে এলো ও আদালতে সোপর্দ করলো, চোরের দল অবস্থা বেগতিক দেখে জানের ভয়ে কম্পমান, যথাসময়ে অন্যান্য অপরাধীদের সাথে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হলো, কাজী সভাসদের উদ্দেশ্যে বললেন, জনগন এই নিশাচোরদের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এখণ অন্যান্য চোরদের শিক্ষার জন্য এদের এমন শাস্তির নির্দেশ দেবো যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, কাজী জল্লাদ ডাকার হুকুম করলেন, জল্লাদ তখনো এসে উপস্থিত হননি বাদশাহ সুলতান মাহমুদ গজনভী তার শাহী পোশাক পরিধান করে এজলাসে উপস্থিত হলেন এবং স্বীয় আসনে উপবেশণ করলেন সুলতান মাহমুদকে দেখেই চোখের গুণসম্পন্ন চোরের টনক নড়লো গতরাতে তাদের সঙ্গী চোরই যে দিনের বেলায় সুলতান মাহমুদ, সে বুঝে ফেললো তখন বন্ধুদের বললো, গতরাতে যিনি আমাদের সাথে ছিলেন এবং যার দাড়ি খুব গুণের সেই লোকই হচ্ছেন এই সুলতান মাহমুদ, কানের বিশেষ গুণবিশিষ্ট চোরও তখণ একথার সত্যতা স্বীকার করে বললো, কুকুর ঘেউ ঘেউ করে যে মহান ব্যক্তির খবর দিয়েছিলো তিনি আসলে এই লোকই ছিলেন এমন সময় জল্লাদ এসে উপস্থিত, কাজী চোরদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি তোমাদের গুনাহখাতার কথা স্বীকার করছো? চোরেরা বললো জী হ্যাঁ, মহামান্য কাজী আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি তবে যদি ন্যায়বিচার করতে চান তাহলে আমাদের সবাইকেই শাস্তি দিন, গতরাতে আমরা ছয়জন ছিলাম সবাই মিলেই ঐ রত্নভান্ডার চুরি করেছি এখন আমরা পাঁচজন মাত্র কাজী বললেন, ঐ লোকের পরিচয় বলো তারা বললো, একটু সময় দিন, আমাদের একেক জন একেক বিশেষ গুনের ও দক্ষতার অধিকারী এবং সবাই  নিজ নিজ দক্ষতা ও কলাকৌশল কাজে লাগিয়েছি এখণ আরেকটি গুন ও দক্ষতা কাজে লাগানোর অপেক্ষা করছি নিশ্চয়ই কেউ রয়েছেন যিনি আমাদের নাজাত দিতে পারেন কাজী বললেন,  এসব বুঝিনে, আমি শাস্তিদানের জন্য জল্লাদকে হুকুম দিতে বাধ্য বাদশাহ ছাড়া আর কারো ক্ষমতা নেই ক্ষমা করার, সুলতান মাহমুদ তখণ মুচকি হাসছিলেন সবাই নিরবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন, চোরের দল যে গোপন কথা জানতো তা মুখে আনার সাহস পাচ্ছিলো না শেষ পযন্ত চোরদের একজন নিরুপায় হয়ে জোরগলায় এ পংতিটি আবৃত্তি করলোঃ
ما همه كرد يم كار خويش را

اى بزرى اخر بجنبان ريش را ‘‘ মা হামে কার্দিম কারে খিশরা

এই বুজুর্গ, আখের বেজুম্বার রিশরা’’
ওগো মহান, দিননা নাড়া আপনার গুনের দাড়ি 

সুলতান মাহমুদ এ কবিতা শুনে হেসে উঠলেন তারপর বললেন, যেহেতু চোরের দল অপরাধ স্বীকার করেছে এবং চুরির মালমাত্তাও পাওয়া গেছে এবারের মতো ওদের মাফ করে দাও, তবে ওদের তওবা করতে হবে যে চুরি ডাকাতি করবে না, চোরের দল তওবা করলো, এরপর সুলতানের নির্দেশে তাদের যারযার গুন ও দক্ষতা অনুসারে বিশেষ দায়িত্বে নিয়োগ করা হলো, সুলতান মাহমুদ তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, একবার যেহেতু কথা দিয়েছিলাম সেহেতু মাফ করে দিলাম কিন্তু এরপর থেকে যেমন অপরাধ তেমন শাস্তি অবশ্যই দেয়া হবে, শিক্ষাঃ এ গল্পে এই উপদেশ রয়েছে যে, মানুষ যখন কোন অন্যায়, অপরাধ করে তখন উল্লেখিত ঘটনার মত প্রকৃত বাদশাহ অর্থাৎ আল্লাহ পাক মানুষের সঙ্গে থাকে তিনি মানুষের সকল ভাল-মন্দ কর্ম সম্পর্কে খবর রাখেন, তার নির্দেশিত নিয়ম কানুন ভঙ্গ করার দরুন কিয়ামতে তিনি অপরাধীকে পাকড়াও করবেন তখন তার ক্রোধ ও গযব থেকে কে তাদের রক্ষা করবে? তবে আল্লাহ যাকে মেহেরবানী করেন তার কথা ভিন্ন (মসনবীর গল্প ৭ পৃষ্ঠা)